ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে ৬ মেগা প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন

moheskhali-tapo-biddut-kendro_1কক্সবাজার প্রতিনিধি :::

পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে ১৫টি মেগা উন্নয়ন হাতে নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে ছয় প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণকাজ শেষ হয়েছে। বিদেশী উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হবে কক্সবাজার। একই সঙ্গে বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণও বাড়বে।

জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, এ ১৫ ‘মেগা’ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে— মহেশখালীর মাতারবাড়ীর ৩৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত্ প্রকল্প, মহেশখালীতে বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক আরো চারটি পৃথক তাপবিদ্যুেকন্দ্র, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক সম্প্রসারণ, মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটারের গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্প, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটারের রেললাইন প্রকল্প, পেকুয়ায় নৌবাহিনীর সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ প্রকল্প, রামুতে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আওতায় ক্রীড়া স্কুল নির্মাণ (বিকেএসপি) ইত্যাদি।

জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ ২৫ শতাংশ শেষ। বিমানবন্দরের বর্তমান রানওয়ে ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ১২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এজন্য প্রকল্প এলাকায় বসবাসকারী ৪ হাজার ৪০৯টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে খুরুশকুলে। সেখানে এরই মধ্যে ৪৩ একর জায়গায় মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। ওই জায়গায় আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে চার-পাঁচ তলাবিশিষ্ট শতাধিক ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ শুরু হবে শিগগিরই।

মাতারবাড়ীর কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৪১৪ একর জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে এখন মাটি ভরাট, উন্নয়ন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া পেকুয়া ও মাতারবাড়ীর দুটি বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্রের জন্য তিন হাজার একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) টেকনাফ উপজেলার সাবরাং মৌজায় প্রায় ১ হাজার ১৪৭ একর জমিতে গড়ে তুলছে ‘সাবরাং অর্থনৈতিক অঞ্চল’। এরই মধ্যে অধিগ্রহণকৃত জমি বেজার অনুকূলে হস্তান্তর করা হয়েছে। সাবরাং অর্থনৈতিক অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য মেরিন ড্রাইভ সড়ক সম্প্রসারণ ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।

টেকনাফের জালিয়ারদ্বীপে বিদেশী পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম পার্ক। এ পার্ক স্থাপনের জন্য এরই মধ্যে ২৭১ একর জমি বেজার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ট্যুরিজম পার্কটি বিদেশী পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এরই মধ্যে সেখানে কেবল কার, প্যারাসেইলিং, স্কুবাডাইভিং, সি ক্রুজিংসহ অত্যাধুনিক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এদিকে রামু উপজেলার নোনাছড়ি এলাকায় বিকেএসপির ক্রীড়া স্কুলের জন্য ২৯ দশমিক ৮৫ হেক্টর, পেকুয়া উপজেলার মগনামায় নৌবাহিনীর সাবমেরিন ঘাঁটির জন্য ৩৩৩ দশমিক ৭৩ ও কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ এলাকায় কোস্টগার্ডের স্টেশন স্থাপনের জন্য পাঁচ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

৫ আগস্ট কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ (অতিরিক্ত সচিব) সাজ্জাদুল হাসান এসব প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত শহর কক্সবাজারের উন্নয়নে খুবই আন্তরিক। ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হবে কক্সবাজার।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, এসব মেগা প্রকল্প ছাড়াও কক্সবাজার সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা, শহরের প্রধান সড়কের যানজট নিরসনের বিকল্প উপায়, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বাঁকখালী নদী খনন, শহরে শিশুপার্ক স্থাপন, স্থায়ী শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণসহ নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।

 

পাঠকের মতামত: